পুলিশি হেফাজতে আসামি নির্যাতনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাসের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার সাইফুদ্দিন প্রামাণিক (৭০)। আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সঠিক তদন্তে তা প্রমাণিত হবে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১০ মাস আগে উল্লাপাড়া উপজেলার বেতবাড়ী গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে প্রতিরাতে পুলিশি অভিযানের নামে পুরো গ্রাম তছনছ করাসহ হয়রানি করা হয়। এ হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকার বাণিজ্য করতে থাকে পুলিশ।
এসব নির্যাতনের বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের কাছে সব নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি দীপক কুমার দাস। এরপর থেকে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া ব্যক্তিদের একে একে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে নতুন নতুন মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠাতে থাকেন ওসি।
গত ২৪ মে রাতে উল্লাপাড়া থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে এসে বৃদ্ধ সাইফুদ্দিন প্রামাণিককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। লোহার পাইপ দিয়ে সাইফুদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করেন ওসি। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এরপর ২৫ মে সাইফুদ্দিন প্রামাণিককে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার শারীরিক অবস্থা দেখে ও জবানবন্দি নিয়ে জামিন দেন এবং শারীরিক অবস্থা অবনতি দেখে চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার আদেশ দেন।
অসুস্থ সাইফুদ্দিন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ আমলি আদালতে মামলা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোরশেদুল ইসলাম ও নিখিল কুমার ঘোষ জানান, বাদীর দায়ের করা মামলাটি আদালতে উপস্থাপনের পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসাদুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাদীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে নির্দেশ দেন।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে উল্লাপাড়া থানার ওসি দীপক কুমার দাস বলেন, সাইফুদ্দিন প্রামাণিকের বিরুদ্ধে অনেক আগের একটা মামলা ছিল। তাকে সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমি কিংবা আমার কোনো পুলিশ সদস্য তাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করিনি। আদালত তদন্ত করলে সঠিক ঘটনা বের হয়ে আসবে।